শুরুটা হয় পাল্টাপাল্টি ধাওয়া থেকে, তারপর ঘটে হামলার ঘটনা। এক পক্ষে ছিলেন কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারীরা, অন্য পক্ষে ছাত্রলীগ। এ ঘটনায় আহত ২৯৭ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁদের মধ্যে ১২ জনকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

আজ সোমবার এই ঘটনার শুরু হয় দুপুরে বিজয় একাত্তর হলে। আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা টিএসসিতে সমাবেশ করার পর বেলা আড়াইটার দিকে তাঁদের একটি অংশ মিছিল নিয়ে হলপাড়ার দিকে যায়। অপর অংশ টিএসসিতেই অবস্থান করে। এই প্রতিবেদক হলপাড়ায় যাওয়া মিছিলটি অনুসরণ করেন।

আন্দোলনকারীরা হলপাড়ায় গিয়ে প্রথমে মিছিল নিয়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল প্রাঙ্গণে প্রবেশ করেন। হলের ভেতরের ফটকের সামনে গিয়ে তাঁরা রিকশায় থাকা মাইকে ‘বঙ্গবন্ধু হলের ভয় নাই, রাজপথ ছাড়ি নাই’সহ নানা স্লোগান দিতে থাকেন। কয়েকজন হলের ভেতরে ঢুকে কক্ষে থাকা শিক্ষার্থীদের আনতে যান। মিনিট কয়েক পর মিছিলটি বের হয়ে আসে। এ সময় তাঁরা ‘বাধা দিলে বাধবে লড়াই’সহ নানা স্লোগান দেন। বঙ্গবন্ধু হল থেকে বের হয়ে আন্দোলনকারীদের মাইক থেকে বলা হয়, তাঁরা খবর পেয়েছেন, কয়েকজন আন্দোলনকারীকে মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হলে আটকে রাখা হয়েছে। এরপর তাঁরা প্রবেশ করেন জিয়াউর রহমান হলে। হলের সামনে গিয়ে তাঁরা ‘দালালদের কালো হাত, ভেঙে দাও গুঁড়িয়ে দাও’সহ নানা স্লোগান দেন। আন্দোলনকারীদের কয়েকজন ভেতরে থাকা শিক্ষার্থীদের আনতে হলে প্রবেশ করেন। এ সময় বাইরে আন্দোলনকারীদের জমায়েত থেকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ডাইরেক্ট অ্যাকশন’সহ নানা স্লোগান দেওয়া হয়।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আন্দোলনকারীদের মিছিলটি জিয়াউর রহমান হল থেকে বের হয়ে বিজয় একাত্তর হলের ফটকের দিকে যায়। মিছিলটি হলের ফটকে যাওয়ার পর মাইকে বলা হয়, আন্দোলনকারীদের কয়েকজনকে বিজয় একাত্তর হল সংসদে আটকে রাখা হয়েছে। একপর্যায়ে মাইকে শিক্ষার্থীদের একাত্তর হলের ভেতরে ঢোকার আহ্বান জানানো হয়। বলা হয়, ‘সন্ত্রাসীদের ধরে নিয়ে আসুন।’ একপর্যায়ে আন্দোলনকারীরা হলের বাগানে ঢুকে পড়েন। তাঁরা নিচ থেকে ইট ও পাথরের টুকরা, ছেঁড়া জুতা প্রভৃতি হলের বিভিন্ন তলায় থাকা ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের লক্ষ্য করে ছুড়তে থাকেন। ওপর থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও প্লাস্টিকের বোতল, ঢিল প্রভৃতি ছুড়ছিলেন। দুই পক্ষই পরস্পরকে অকথ্য গালিগালাজ করছিল।

এর মধ্যে হলের বাগানে ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতা-কর্মীর সঙ্গে আন্দোলনকারীদের মারামারি বেধে যায়। এরপর হল শাখার কিছু নেতা আন্দোলনকারীদের দিকে এগিয়ে এলে পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পরে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা হলের বিভিন্ন তলা থেকে লাঠিসোঁটা, কাঠ, লোহার পাইপ ও বাঁশ নিয়ে দল বেঁধে নিচে নেমে আন্দোলনকারীদের ধাওয়া দেন। আন্দোলনকারীরা ছত্রভঙ্গ হয়ে যান, অনেকে দৌড়ে জসীমউদ্‌দীন হলের ভেতরে প্রবেশ করেন। এরপর ছাত্রলীগের সঙ্গে আন্দোলনকারীদের দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়। বিজয় একাত্তর হলে ঘটনার শুরু হলেও আশপাশের হলগুলোর (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও জিয়াউর রহমান হল) ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরাও সংঘর্ষে যোগ দেন। সংঘর্ষ চলাকালে দুই পক্ষ পরস্পরের দিকে ইট ও পাথরের টুকরা ছুড়তে থাকে। দুই পক্ষের নেতা-কর্মীদের হাতেই ছিল লাঠিসোঁটা ও বাঁশ।