জিন্নাত আরা নূর : কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে পুলিশের গুলিতে নিহত হয়েছেন বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ।

১৬ জুলাই বেলা ২ টার দিকে রংপুর বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে গুলিতে আহত হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন আন্দোলনকারী আবু সাঈদ। পরে সহপাঠীরা তাকে হাসপাতালে নিয়ে গেলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করে। মৃত্যুর একদিন আগে ১৫ জুলাই আবু সাঈদ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফেসবুকে চলমান আন্দোলনে শিক্ষকদের অংশ গ্রহণ না করা নিয়ে আক্ষেপ করে একটি পোস্ট দেন।

১৯৬৯ সালে ১৮ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদের রক্ষা করতে গিয়ে শহিদ হন সেই সময়কার রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক (তৎকালীন রিডার) সৈয়দ মোহাম্মদ শামসুজ্জোহা। এই শিক্ষকও তার মৃত্যুর আগের দিন ১৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের এক সভায় বলেন- “আজ আমি আমার ছাত্রদের রক্তে রঞ্জিত। এরপর কোন গুলি হলে তা ছাত্রকে না লেগে যেন আমার আমার গায়ে লাগে।”

সেই শামসুজ্জোহার এই উক্তিটি ফেসবুকে পোস্ট করে নিজের মৃত্যুর আগের দিন আবু সাঈদের লিখেছেন- “স্যার! এই মুহূর্তে আপনাকে ভীষণ দরকার স্যার! আপনার সমসাময়িক সময়ে যারা ছিল সবাই তো মরে গেছে, কিন্তু আপনি মরেও অমর। আপনার সমাধি, আমাদের প্রেরণা। আপনার চেতনায় আমরা উদ্ভাসিত। এই প্রজন্মে যারা আছেন, আপনারাও প্রকৃতির নিয়মে একসময় মারা যাবেন। কিন্তু যতদিন বেঁচে আছেন মেরুদণ্ড নিয়ে বাচুঁন। ন্যায্য দাবিকে সমর্থন জানান, রাস্তায় নামুন, শিক্ষার্থীদের ঢাল হয়ে দাঁড়ান। প্রকৃত সম্মান এবং শ্রদ্ধা পাবেন। মৃত্যুর সাথে সাথেই কালের গর্ভে হারিয়ে যাবেন না। আজন্ম বেঁচে থাকবেন শামসুজ্জোহা হয়ে।
অন্তত একজন ‘শামসুজ্জোহা’ হয়ে মরে যাওয়াটা অনেক বেশি আনন্দের, সম্মানের আর গর্বের।” পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদের নিহত হওয়ার পুরো ঘটনার একটি ভিডিও তে ফেইসবুকের মাধ্যমে প্রকাশ করা হয় । ভিডিওতে দেখা গেছে- আন্দোলকারীদের সঙ্গে পুলিশের সংঘর্ষ শুরু হওয়ার সময় সবার সামনে ছিলেন আবু সাঈদ। আন্দোলনকারীদের লক্ষ্য করে পুলিশ রাবার বুলেট ছুড়তে থাকলে আন্দোলনকারী অন্যরা পিছন দিকেও চলে গেলেও হাতে একটি লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে স্লোগান দিতে থাকেন আবু সাঈদ। এই সময় ঠিক সামনে থেকে তাকে লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। ক্রমাগতভাবে পুলিশের ছুড়তে থাকা রাবার বুলেটে কয়েকটি শরীরে লাগে তার। গুলি শরীরে লাগলে এক পর্যায়ে পিছু হটেন আবু সাঈদ। ফুটপাতে বসে পড়েন। তখন পেছন থেকে কয়েকজন আন্দোলনকারী দৌড়ে এসে তার হাত-পা ধরাধরি করে নিয়ে যায়।
রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান বলেন, “মেডিক্যালের সার্জারি ওয়ার্ডে ভর্তির আগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে। তবে তাঁর শরীরের একাধিক স্থানে রাবার বুলেটের ক্ষত রয়েছে। নাক দিয়ে রক্ত ঝরছিল। কিন্তু রাবার বুলেটের আঘাতে মারা গেছেন কি না, তা ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন ছাড়া এ মুহূর্তে বলা সম্ভব নয়।”

নিহত আবু সাঈদের বড় ভাই রমজান বলেন, “বাবা মকবুল হোসেন শারীরিক অসুস্থতায় শয্যাশায়ী। পরিবারের সবার উপার্জন দিয়ে তাকে এতদূর পর্যন্ত পড়ালেখা চালিয়ে নিয়ে এসেছি। একদিন সে অনেক বড় হবে, সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবে সে আশা ছিল।”