দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা অন্যায়-অনিয়মের বিরুদ্ধে ছাত্রদের দৃঢ় প্রতিবাদের নামই বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন।সরকারি চাকরিতে কোঠা বাতিলের দাবিতে প্রথমে ছাত্ররা এ আন্দোলন শুরু করে।পরবর্তীতে আন্দোলনকারীদের উপর সরকারের সহিংসতায় এ আন্দোলন ছাত্র-জনতার
মুক্তির আন্দোলনে রূপ নেয়।

দেশের বিভিন্ন স্তরের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে এ আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরাও খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন অঞ্চল, জিরো পয়েন্ট,শিববাড়ি,রয়েল-এর-মোড়সহ খুলনার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থানে এ আন্দোলন চালিয়ে যায়।

৫ আগস্ট,২০২৪ বাংলাদেশ নতুন করে স্বাধীন হওয়ার পর থেকে খুলনা সংস্কারের কাজে লেগে পড়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।ছাত্র আন্দোলন ও তার পরবর্তী দেশ গঠনে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কাজকে কিভাবে দেখছেন খুলনার সাধারণ মানুষ-তাদের মতামত ও প্রত্যাশা তুলে ধরেছেন খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি অর্পিতা।

খুলনার ডাক বাংলার সোহরাওয়ার্দীর মার্কেটের সামনে ছোটদের জামা ও আন্ডার গার্মেন্টস নিয়ে বসেছেন আহাদ মিয়া।তিনি বলেন,”ছাত্ররা যা করছে না,ওগো লাইগা মন থেইকা আল্লাহর কাছে দোয়া করি।আগে তো ছোট্ট ছোট্ট কিছু পোলা এক একখান রিভালবার লইয়া আইতো আর টাকা চান্দা চাইতো।মাসে ১৫-২০ হাজারেও কুলাইতোনা।অহন আর দেওন লাগেনা।এইদিকে ব্রান্ডের জিনিস লইয়া হাজার হাজার টাকা বাকি থুইয়া গেছে।

তিনি হাসতে হাসতে আরো বলেন, কিছুদিন আগে পৌরসভা বন্ধ আছিল।কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী দেখলাম এইখানে আইসা ঝাড়ু দিয়া সব পরিষ্কার করতাছে,ময়লা তুলে নিয়ে গেল। জিজ্ঞাসা করল চাচা কোন সমস্যা আছে? পরে কইল চাচা আর যদি চান্দা লইতে আসে এহন তাইলে পিটমোড়া দিয়া বাইন্ধা রাখবেন।আমাদের খবর দিবেন।”

চায়ের কেটলি হাতে নিয়ে চা বিক্রি করেন ওহাব আলী।কথা প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”দিনে ৭০-৮০ কাপ চা বিক্রি হয়,বেশি হলে কোনদিন ১০০-১২০ কাপ ও হয়।আগে মোটরসাইকেল থামিয়ে দাঁড়াতো আর সঙ্গী-সাথী নিয়ে ১৫-২০ কাপ চা খেয়ে বিল না দিয়ে চলে যেত।খাওয়ার থেকে নষ্টই করতো বেশি। ছাত্র আন্দোলনের পর থেকে কিছুদিন আর তাদের দেখাই যায় না। শান্তিতে আছি এখন যা ইনকাম হয় এতে কোনমতে চলে যায়। আজ আন্দোলন হইছে বলে কারোরে উপরি দেওয়া লাগেনা।শান্তিতে আছি ভালো আছি। “

ভ্যানে করে ছেলেদের টি-শার্ট বিক্রেতা অমৃত বলেন,”প্রতি শার্টেই কমিশন দেয়া লাগতো। আমার একটা শার্টে লাভ হয় ২০ টাকা।কখনো যদি তাদের কোন শার্ট পছন্দ হতো তাহলে তা নিয়ে চলে যেত। টাকা চাওয়া যেন পাপ, দেওয়াও পাপ।বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা বলে গেছে আর কারো কাছে ফ্রি দেওয়া লাগবে না।আর দিবো ও না।সবকিছু এভাবে থাকলে হয়, তবে এবার থেকে প্রতিবাদ করব। আর চুপ করে মেনে নেব না।”

একজন রিকশাওয়ালা জানান,”ইচ্ছামতো আইসে রিকশায় উঠতো।সিরিয়াল ধরে যে কয়ডা রিকশা লাগে সবগুলা বুক করত। সারাদিন ইচ্ছা মত ঘুরতো কিন্তু টাকা দিত না। কেউ যদি দিতও তাও খুব কম। এখন আর তাদের দেখিনা। কোথাও মনে হয় ঘাপটি মেরে পড়ে আছে সুযোগ পাইলেই বের হবে হয়তো।আন্দোলনের সময় ছাত্রদের প্রতিবাদ নিজ চোখে দেখছি। আপনাদের কাছে অনুরোধ তারা যেন আর সুযোগ না পায়।”

একজন হোটেল মালিকের সাথে কথা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,”বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীরা শুধু আন্দোলন করে থেমে যায়নি বরঞ্চ তারা খুলনার বিভিন্ন জায়গা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন সহ। সুন্দর করে বিভিন্ন দেয়ালে ছবিও এঁকেছে। যদি কিছুদিন আগের খুলনা আর এখন এর খুলনা দেখা হয় তবে অনেক পার্থক্য। এই খুলনার বাতাসে ও যেন শান্তি আছে।”