বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের পর দীর্ঘ সময় ধরে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বাভাবিক কার্যক্রম স্থবির হয়ে আছে। স্থবিরতা নিরসনে এবং সুষ্ঠুভাবে সকল একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম পরিচালনায় উপাচার্য নিয়োগের বিকল্প নেয়। এমতাবস্থায় দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে কয়েক দফা আন্দোলন করেছে শিক্ষার্থীরা।

দ্রুত উপাচার্য নিয়োগের আভাস দেওয়া হলেও এখনো প্রজ্ঞাপন না দেওয়ার কারণে আজ মঙ্গলবার (১৭ই সেপ্টেম্বর) সকাল ১০:০০ ঘটিকা হতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের জিরো পয়েন্টে দ্রুত উপাচার্য এবং উপ-উপাচার্য নিয়োগের দাবিতে মানববন্ধন করেন শিক্ষার্থীরা।

উপাচার্য নিয়োগ নিয়ে প্রহসন করা হচ্ছে বলে মনে করেন ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী মাসুদ রানা। তিনি বলেন, বিগত একমাস ধরে চবি ক্যাম্পাস অভিভাবক শূন্য, ৪টি স্বায়িত্বশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে ঢাবি, জাবি, রাবিতে ভিসি নিয়োগ দিলেও চবিতে নিয়োগ দেওয়া হয় নি, এটাকে আমরা প্রহসন হিসেবে নিচ্ছি।
আমরা অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নিকট আবেদন জানাই আজকের মধ্যে ভিসি নিয়োগ দিতে হবে।

৮তারিখ থেকে ভিসি নিয়োগের দাবি জানালেও কর্তৃপক্ষ সেটাকে তোয়াক্কা করছে না বলে মন্তব্য করেন ২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাব্বির। তিনি বলেন, আমরা এখনো আমাদের ক্লাশরুমে যেতে পারছি না, আমরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছি না, এর কারণ আমাদের ভিসি নেই।
ভিসি নিয়োগ নিয়ে ৮ তারিখ থেকে আমরা আন্দোলন করছি কিন্তু তারা সেটা তোয়াক্কা করছে না। ভিসি নিয়ে তারা বিজ্ঞাপন বিজ্ঞাপন খেলা শুরু করেছে।

১৯-২০ সেশনের শিক্ষার্থী ফাতেমা হোসেন বলেন, এই নিয়ে আমরা ৩য় বারের মতো আন্দোলন করছি, আমরা কি এখানে আন্দোলন করতে আসছি নাকি পড়াশোনা করতে আসছি।
অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা যে পরিমান সুযোগ সুবিধা পাচ্ছে আমরা সে রকম সুযোগ এখনো সুবিধা পাচ্ছি না, এটাও একটি বৈষম্য।
আমাদের কথা ভেবে দ্রুত ভিসি নিয়োগ দিতে হবে।

শিক্ষার্থীদের কাজ পড়াশোনা ও গবেষণা করা, আন্দোলন নয় মন্তব্য করে ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী ফয়সাল বলেন, শিক্ষকদের উচিত ছিলো আমাদেরকে পূর্ণ সহযোগিতা করা, কিন্তু দেখা যাচ্ছে বিপরীতে শিক্ষকদের মধ্যে কিছু মহল ভিসি নিয়োগের ক্ষেত্রে বিরুদ্ধ আচরণ করছে, এটা খুবই দুঃখজনক। যত যায় হোক, আমরা চাই দ্রুত অময়ের মধ্যে আমাদের ভিসি নিয়োগের প্রজ্ঞাপন দিতে হবে।

উপদেষ্টাদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে ভিসি নিয়োগের জন্য বলে জানান ১৮-১৯ সেশনের শিক্ষার্থী মুজাহিদ। তিনি বলেন, আমাদের সর্বশেষ ক্লাশ হয়েছে ১২ই জুন, এরপর কুরবানি ঈদের ছুটি, ছুটির পর শিক্ষকদের পেনশন আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ছাত্র-আন্দোলনের জন্য আর কোন ক্লাশ হয় নি।
ভিসি নিয়োগের জন্য উপদেষ্টাদের যথেষ্ট সময় দেওয়া হয়েছে, এদিকে ক্লাশ- পরীক্ষা সব বন্ধ আছে, এমতাবস্থায় আজকের ভিতর ভিসি প্রজ্ঞাপন না দিলে আগামীকাল থেকে কঠোর কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

চবির সমন্বয়ক ওবায়দুল্লাহ মোহাম্মদ আলী বলেন, স্বৈরাচার শাসকের পতন পরবর্তী  বর্তমান সরকারের উচিত দ্রুত সময়ের ভিতর ভিসি নিয়োগ দিয়ে একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করা।
ঢাবি, জাবি, রাবি সহ অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে ভিসি নিয়োগ দেওয়া হলেও আমাদের এখনো কোন ভিসি নিয়োগ দেওয়া হয় নি।
আজকের ভিতর প্রজ্ঞাপন দিতে হবে ভিসি-প্রো ভিসি একসাথে নিয়োগের বিষয়ে। অনেক সময় দিয়েছি, চবির ভিসি নিয়োগ দেওয়াও রাষ্ট্র সংস্কারের একটি অংশ।
যদি চবির কার্যক্রম চালু না হয় তবে ভবিষ্যতে দেশের জন্য দক্ষ জনশক্তি পাওয়া যাবে না। আমাদের আরো আগে ভিসি নিয়োগ দেওয়া উচিত ছিল।

আজকের ভিতর ভিসি প্রো ভিসি নিয়োগ না দেওয়া হলে আগামীকাল থেকে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক এবং প্রশাসনিক সকল কার্যক্রম বন্ধ থাকবে বলেও জানান তিনি।