
সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছুই হারিয়ে যায়। হারানোর তালিকায় মানুষ নিজেই।
যোগাযোগের জন্য মানুষ কত পদ্ধতি ব্যবহার করেছে। কবুতরও ছিল যোগাযোগের মাধ্যম। একসময় আসে চিঠির যুগ। হাতে লেখা চিঠি। মানুষের আবেগ প্রকাশের অন্যতম প্রধান মাধ্যম।
ডাকপিয়ন, ডাকবক্স এবং তাদের বিলি করা চিঠি এ শব্দ আজকের যুগে খুব প্রয়োজনীয় না হলেও একসময় মানুষের যোগাযোগের অন্যতম প্রধান মাধ্যম। দিনের পর দিন অপেক্ষা করে থেকেছে ডাকপিয়নের জন্য। তার সাইকেলের শব্দের জন্য। একটি এলাকায় সবচেয়ে পরিচিত ছিল এসব ডাকাপিয়নরা।
আগের দিনে ডাকপিয়ন অল্প টাকাতেই খুশি ছিলো। তার সাথী ছিলো সবসময় দুই চাকার একটা সাইকেল। এ যুগটাই আমাদের ডাকপিয়ন, ডাকবাক্স, পোস্ট-অফিস এসব শব্দ থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছে। জন্মের পরপরই যে শিশু মোবাইল, ট্যাব হাতে খেলনা নিয়ে বড় হয়, তার ডাক সম্পর্কে জানার কথাও নয়।
এখন ডাকপিয়নের সাইকেলের বেলের টুংটাং শব্দ হরহামেশাই শোনা যায় না। আগে যেমন পাড়ায় পাড়ায় প্রায় প্রতিদিনই কারো না কারো চিঠি বা অন্য কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে ছুটত সেগুলো বিলি করার জন্য, আজ আর তেমনটা চোখে পড়ে না। আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির কাছে হার মেনেছে সব। কালের অতল গভীরে হারিয়ে যেতে যেতে আজ প্রায় বিলিন হয়েছে। এটাই নিয়ম। ডাকপিয়নের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি হলো কষ্ট করে যখন চিঠি পৌঁছে দেয়। তখন প্রাপক তাকে দেখে যে হাসি টা দেয়। এই হাসি টাই তার সব কষ্ট গুলোকে আর কষ্ট দিতো না। সাইকেল চালিয়ে কাঁধে ব্যাগ নিয়ে চিঠি পৌঁছে দেওয়াই ছিলো তার কাজ। সাইকেলের সাথে মিশে থাকে ডাকপিয়নের জীবনী আর চিঠি গুলোর মাঝে। ডাকপিয়ন এক আবেগের নাম। একটা সময় মানুষ ডাকপিয়ন নাম শুনতেই অস্থির হয়ে পড়তো। কত মানুষের ভালোবাসা,দুঃখ,কষ্টের কাহিনী ডাকপিয়ন বাড়ি বাড়ি পৌঁছে দিতো।কালের বিবর্তনে ডাকবাক্স আর ডাকপিয়ন দুটোই প্রায় বিলুপ্ত।
হাতে লেখা চিঠির জায়গায় আজ মোবাইলের মেসেজ, ম্যাসেঞ্জার, ই-মেইল বা কুরিয়ার স্থান দখল করে নিয়েছে। স্থান পরিবর্তনই প্রকৃতির নিয়ম। তবে এ কথা বলতে পারি চিঠিতে যে আবেগ জড়ানো থাকে আজকের আধুনিক সরঞ্জামে বহন করা ডিজিটল সেই খবরে এত আবেগ জড়িয়ে থাকে না। ডাকঘর, ডাকবাক্স, ডাকপিয়ন আর চিঠি নিয়ে যুগ যুগ ধরে লেখা হয়েছে কত হাজার হাজার গান, গল্প, উপন্যাস ও কবিতা। কত মা-বাবা, ভাই-বোনের কান পড়ে থাকতো ডাকপিয়নের সাইকেলের বেলের দিকে। পাড়ায় মহল্লায় ডাকপিয়ন ঢুকলেই মানুষ এসে ভিড় জমাতেন। তার নামে কোনো চিঠি আছে কিনা, জানতে। দিনের পর দিন একটি চিঠির অপেক্ষায় থাকতেন তারা।
ডাকবাক্স একসময়ের আবেগের নাম ছিলো। এখনো আবেগ তবে সেটা প্রায় বিলুপ্ত। একসময় এর স্থান ছিলো সেই মানুষের মনে। কত যত্নে ছিলে তা কল্পনার বাইরে। আজ দেশ হয়েছে ডিজিটাল। কিন্তু ডাকবাক্সের হয়নি কোনো উন্নতি। আধুনিক তথ্যপ্রযুক্তি ও যোগাযোগমাধ্যম নিয়েই ব্যস্ত সবাই। ডাকবাক্সের স্থান হয়েছে জঙ্গলে গুল্ম লতার পাশে কিংবা কোনো পুরাতন আসবাবপত্রের দোকানে।
ডাকবাক্সে আজ ময়লা পরছে। তালা টায় মরিচিকা পড়তে পড়তে সেটা আর চাবি দিয়েও খুলবে না মনে হয়। চিঠির জন্য অপেক্ষা। তবু চিঠি আসে না। কেউ চিঠি লেখে না। রাস্তার পাশে পড়ে থাকে ধুলো জমা ডাকবাক্স। ভাঙাচোরা সাইকেলে চড়ে সময়মতো ডাকবাক্সের তালা খুলতেও আসেন না ডাকপিয়ন। আধুনিকতার সঙ্গে তাল মেলাতে না পেরে হারিয়ে যাচ্ছে ডাক বিভাগের পোস্টাল সার্ভিস বা ডাকসেবা।
ডাকঘর, ডাকবাক্সের অস্তিত্ব থাকলেও তার আর কদর নেই। তাই, ডাকবাক্স অবহেলায় চিঠির অভাবে জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে থাকে। কখনো কখনো তাতে আবার তালা থাকে না। থাকলেও চিঠি থাকে না। ফলে, অনেক সময় রাস্তার পাশে মানুষের পায়ের ধাক্কায় গড়াগড়ি যায়। পড়ে থাকে রাস্তার পাশেই। খামে ভরা কাগজের চিঠির জন্য মানুষ ডাকঘরের সামনে অপেক্ষা করতো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কখন আসবে প্রিয়জনের চিঠি।
এ আধুনিক সমাজে মানুষ এখন প্রবাসী স্বজনদের সঙ্গে কিংবা প্রিয়জনের যোগাযোগের সুযোগটা যখন ইচ্ছে তখনই অনলাইনে উপভোগ করেছে। হালফিল জমানায় সব যোগাযোগই হয় এক নিমেষে। বার্তা আদান-প্রদানে চিঠির বদলে সবার ভরসা এখন নতুন নতুন প্রযুক্তি এখন শহর থেকে দেশের প্রত্যান্ত অজপাড়াগাঁয় পৌঁছে গেছে ইন্টারনেট ও ই-মেইল সেবা। আর এটাই হয়তো বড় কারন ডাকবাক্স হারিয়ে যাওয়ার।
তাই ডাকঘরের মাধ্যমে মান্ধাতা যুগের চিঠি, টেলিগ্রাম সেবার প্রয়োজনে ও ফুরিয়েছে।।
লেখকঃ- কাজী ফিরোজ আহাম্মদ পারভেজ। শিক্ষার্থী-১ম বর্ষ, সিএসই বিভাগ।
ঢাকা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি।
Average Rating
আরো খবর
সামসুদ্দোহা ও মাইদুল’র নেতৃত্বে প্রথম আলো বন্ধুসভা ‘ডিআইইউ’ শাখা’র কমিটি
মাস্টারমাইন্ডের ছাত্রীকে ধর্ষণের পর হত্যা : জবানবন্দি দিচ্ছেন দিহান
ফেনীর পরশুরামে বঙ্গবন্ধু জাতীয় যুব দিবস উপলক্ষ্যে আলোচনা সভা ও চেক বিতরণ