
বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী প্রয়াত এম.আই. ফারুকীর বর্ণাঢ্য জীবন ও আইনাঙ্গনে তাঁর অসামান্য অবদানের স্মরণে সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশন -এর মিলনায়তনে বাংলাদেশ লিগ্যাল এইড অ্যান্ড সার্ভিসেস ট্রাস্ট (ব্লাস্ট) এবং এম.আই. ফারুকী এন্ড এসোসিয়েটস এর যৌথ উদ্যোগে ২৯ জুন ২০২৫ স্মরণসভা অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মোঃ রেজাউল হক। আরও উপস্থিত ছিলেন বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস, বিচারপতি এম. এ. মতিন, অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান এবং সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবীরা।
সভায় বক্তারা প্রয়াত এম আই ফারুকীর পেশাগত জীবনের বিভিন্ন দিক, তাঁর মানবাধিকার বিষয়ক অবদান, জনস্বার্থ মামলা পরিচালনা এবং সাংবিধানিক ব্যাখ্যায় অবদানের কথা গভীর শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করেন।
বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট আপিল বিভাগের বিচারপতি মোঃ রেজাউল হক, তিনি বলেন, প্রয়াত এম.আই ফারুকী ২০০১ সালে সিনিয়র আইনজীবী হন এবং তার হাত ধরে জনস্বার্থ মামলা এবং জুডিসিয়াল এক্টিভিজমের দ্বার উন্মোচন করেছেন। তিনি শিশু অধিকার রক্ষায় বিভিন্ন সচেতনতা বৃদ্ধির কাজ করে গেছেন। পরিবেশ সুরক্ষায় টু-স্ট্রোক তিন-চাকার পরিবহণ নিষিদ্ধ করার জন্য জনস্বার্থ মামলা এক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে আসামীর বাধ্যতামূলক মৃত্যুদন্ড রোধ করার জন্য অন্যতম ভূমিকা পালন করেছেন। তিনি যৌনকর্মীদের অবৈধ উচ্ছেদ নিয়েও আইনী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন এক পুরোধা ব্যক্তিত্ব যার গমন আমাদেরকে অভিভাবক শুন্য করে রাখবে সবসময়।

বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুস, হাইকোর্ট বিভাগ, বাংলাদেশ সুপ্রীম কোর্ট বলেন, জনাব ফারুকীকে স্মরণ করা জরুরি আমাদের নিজেদের জন্যই—যাতে তাঁর করে যাওয়া কাজগুলো চর্চা করতে পারি। তিনি অবসরের পর বিচারকদের বিভিন্ন বিভাগে নিয়োগ দেয়ার প্রথার বিরোধিতা করতেন এবং বিশ্বাস করতেন, এ ধরনের অনুশীলন বিচার বিভাগের স্বাধীনতাকে খর্ব করে।
সভায় উপস্থিত সুপ্রিম কোর্টের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এম. এ. মতিন বলেন, এম আই ফারুকী স্যারের প্রয়ান আমাদের আইন অঙ্গনের জন্য এক অপূরণীয় অভাব রয়ে যাবে। তার গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো আমরা দেখতে পাব আইনের বিভিন্ন জার্নালে। তিনি অনেক মেধাবী আইনজীবী তৈরী করে গেছেন যার মাধ্যমে উনি বেঁচে থাকবেন আমাদের সবার মাঝে।
অ্যাটর্নি জেনারেল মোহাম্মাদ আসাদুজ্জামান বলেন, উনি বেঁচে থাকবেন উনার কাজের মধ্য দিয়ে, উনি বেঁচে থাকবেন মাননীয় বিচারপতি মোঃ রুহুল কুদ্দুসের কর্মময় জীবনের মধ্য দিয়ে।
এছাড়াও এম আই ফারুকীর সুপ্রিম কোর্টের আইনি জীবন ও মানবাধিকার বিষয়ক মামলা নিয়ে স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জমির উদ্দিন সরকার এবং এম. কে. রহমান এবং শ্রদ্ধা নিবেদন করেন, সুপ্রিম কোর্ট বার এসোসিয়েশনের সভাপতি এ এম মাহবুব উদ্দিন খোকন এবং ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহফুজুর রহমান মিলন। প্রয়াত আইনজীবী এম আই ফারুকীর পেশাগত ও চেম্বার জীবন নিয়ে স্মৃতি চারণ করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী নাজনিন নাহার দিপু, সাদিয়া আরমান, এম. শামসুল হক। পারিবারিক জীবন নিয়ে স্মৃতি চারণ করেন আইনজীবী এম আই ফারুকীর জ্যেষ্ঠ সন্তান ইস্তিয়াকুর রহমান ফারুকী।
সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এবং ব্লাস্টের অবৈতনিক নির্বাহী পরিচালক সারা হোসেন এর সঞ্চালনায় সভার বক্তারা বলেন, এম. আই. ফারুকী ছিলেন একজন অসাধারণ মানবাধিকার সংরক্ষক ও ন্যায়বিচারের যোদ্ধা, যাঁর পেশাগত নৈতিকতা ও সাহসিকতা নতুন প্রজন্মের জন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। তিনি আইনজীবী হিসেবে শুধু কোর্টরুমে সীমাবদ্ধ থাকেননি; বরং সারা জীবন মানুষ ও মানবাধিকার রক্ষার জন্য নিরলসভাবে কাজ করে গেছেন। জনাব এম আই ফারুকীর জনস্বার্থ মামলাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য মামলাসমূহ হচ্ছেঃ শুকুর আলির বাধ্যতামূলক মৃত্যুদণ্ড -এর মামলা, টু-স্ট্রোক যানবাহন নিষিদ্ধকরণ সংক্রান্ত পরিবেশ সংরক্ষণ বিষয়ক মামলা, এবং আবিদ খান ওসাদাকত খান ফাক্কুর নাগরিকত্ব বিষয়ক মামলা, যার মাধ্যমে নাগরিকত্বহীনতা রোধে একটি ঐতিহাসিক দৃষ্টান্ত স্থাপিত হয়।