প্রতিটি বিদায় ই কষ্টের। দিনশেষে সবাইকে আগে বা পরে বিদায় নিতে হয়। সেই বিদায়ে আজ নাম লেখালেন রিয়াল মাদ্রিদের ৩ কিংবদন্তি একসাথে। কার্লো আনচেলত্তি তিনি পুরোপুরি রিয়াল মাদ্রিদ ছেড়ে দিচ্ছেন, যোগ দিবেন ব্রাজিল ন্যাশনাল দলে। অন্যদিকে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে ক্লাবের হয়ে শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলেন লুকা মদ্রিচ। মাদ্রিদ জার্সিতে তাকে দেখা যাবে ক্লাব বিশ্বকাপ পর্যন্ত। নিরবে বিদায় নেন আরেক মাদ্রিদ তারকা লুকাস ভাসকেজেরও। এমন আবেগঘন মুহূর্তে মাঠে সশরীরে উপস্থিত ছিলেন কিংবদন্তী ফুটবলার টনি ক্রুস।

লা লিগায় ঘরের মাটিতে নিজেদের শেষ ম্যাচ খেলতে নেমেছিলো রিয়াল মাদ্রিদ। এদিন ই কার্লো কে শেষ বিদায় দেওয়া হবে, তা আগে থেকেই নির্ধারিত ছিলো। ম্যাচের পরতে পরতে প্রতিটি দর্শকদের মুখে ছিলো কার্লোর ভালোবাসা। শিক্ষকের শেষ ম্যাচবিদায়ী ম্যাচ জয় উপহার দেওয়াই তো কাম্য হওয়ার কথা রিয়াল শিবিরের। কিলিয়ান এমবাপ্পের কল্যাণে সেটাই হয়েছে। রিয়াল সোসিয়েদাদ হেরেছে ২-০ গোলে।

ক্লাবের ১২৩ বছরের ইতিহাসে কার্লো আনচেলত্তি সবচেয়ে সফল তম কোচ। সবমিলিয়ে মাদ্রিদ কে এনে দিয়েছেন ১৫ টি শিরোপা। মাদ্রিদ কে কোচিং করিয়েছেন ২ দফায়। ইতালিয়ান এই মাস্টারমাইন্ড জিতেছেন তিনটি চ‍্যাম্পিয়ন্স লিগ, দুটি ক্লাব বিশ্বকাপ, তিনটি ইউরোপিয়ান সুপার কাপ, দুটি লা লিগা, দুটি কোপা দেল রে, দুটি স্প‍্যানিশ সুপার কাপ ও একটি ইন্টারকন্টিনেন্টাল কাপ।

ম্যাচ শেষে বিদায়ী ভাষণে আবেগ আপ্লূত হয়ে আনচেলত্তি বলেন, আমি খুবই খুশি ও গর্বিত, অসাধারণ একটা সময় কেটেছে। এখানে এই সময়ে যা কিছু ঘটেছে, এর কোনো কিছুই আমরা ভুলে যেতে পারি না। মানুষের ভালোবাসা নিয়ে, লম্বা সময় ধরে অসাধারণ ক্লাবকে কোচিং করানোর গর্ব নিয়ে আমি বিদায় নিচ্ছি। রিয়াল মাদ্রিদ (আমার কাছে) নিজের বাড়ির মতো, একটি পরিবার। ছয় বছর ধরে ব‍্যাপারটি এমনই ছিল। শিরোপাগুলোর জন‍্য, এখানকার আবহ’র জন‍্য আমাদের সময় কেটেছে অসাধারণ।’

অন্যদিকে, ২০১২ সালে ইংলিশ ক্লাব টটেনহ্যাম থেকে রিয়ালে যোগ দেন লুকক মদ্রিচ। লা লিগার ফ্লপ সাইনিং থেকে তিনি হয়ে উঠেন লা লিগার একজন কিংবদন্তী ফুটবলার। লস ব্লাঙ্কোসদের হয়ে সবমিলিয়ে খেলেছেন ৫৯১ ম‍্যাচ। এই সময়ে ছয়টি চ‍্যাম্পিয়ন্স লিগসহ জিতেছেন ২৮টি শিরোপা। আরো একটি শিরোপা জেতার সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে সামনে (ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপ)। তবে, ঘরের মাঠে এই শেষ বিদায় মদ্রিচের। দর্শকদের উদ্দ্যেশ্যে তিনি বলেন, ‘এই মুহূর্তটা আসুক, আমি কখনও চাইনি। তবে এটা ছিল সুদীর্ঘ, কিন্তু বিস্ময়কর এক অভিযাত্রা। সবার আগে আমি ক্লাব, ক্লাব প্রেসিডেন্ট ফ্লোরেন্তিনো পেরেজকে ধন‍্যবাদ জানাতে চাই। আমি ধন‍্যবাদ জানাতে চাই এখানে পাওয়া সব কোচ ও সতীর্থদের যারা সবসময় আমাকে সঙ্গ দিয়েছেন এবং সেই সব মানুষদের, যারা আমাকে সাহায‍্য করেছে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আপনাদের সবাইকে অন্তরের অন্তস্থল থেকে ধন‍্যবাদ। আমার পরিবারকে ধন‍্যবাদ। আমরা জিতেছি অনেক, আমরা কাটিয়েছি বিস্ময়কর অনেক মুহূর্ত। এই বছরগুলোতে আপনারা আমাকে অনেক ভালোবাসা দিয়েছেন। আপনারা আমাকে যা দিয়েছেন, তার জন‍্য ধন‍্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই। আমার মনে গেঁথে যাওয়া একটা কথা আপনাদের শোনাই, ‘শেষ হওয়ায় কেঁদো না, বরং এটা ঘটেছে বলে হাসো।’”